Published by Prothom Alo | Amader Shomoy 04 November, 2023 (Link Here)
Come forward to end violence against women and girls
পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী চুক্তি। দীর্ঘ সময় ধরে এই সংকটটি রাজনৈতিকভাবে সমাধান করা যায়নি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের বিধিবিধান ও আইন অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে কয়েক দফা সংলাপের পর ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সুদীর্ঘকাল বিরাজমান সংকট নিরসনে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য জেলায় দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় পাহাড়ি-বাঙালি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখার স্বার্থে শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে আরও অনেক কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
চুক্তি স্বাক্ষরের ক্রমান্বয়ে চুক্তির বিভিন্ন ধারা বাস্তবায়িত হচ্ছে। চুক্তি বাস্তবায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত ২৬ বছরে শান্তিচুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে অধিকাংশ উল্লেখযোগ্য ধারা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এই ৭২টি ধারার মধ্যে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে ৬৫টি ধারা। আংশিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩টি এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন আছে আর ৪টি ধারার।
অনেকের মনে করেন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো মৌলিক অগ্রগতি হয়নি। শান্তিচুক্তির পর গত ২৩ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তির যে উল্লেখযোগ্য ধারাগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে সেগুলো হলো : ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ ও ২০১৬ (সংশোধনী) পাস হয়েছে। আইনের অধীনে বিধিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।শান্তিবাহিনীর সদস্যদের সাধারণ ক্ষমা এবং পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শান্তিচুক্তি করার পর ২৫২৪ জনের বিরুদ্ধে ৯৯৯টি মামলার তালিকার মধ্যে ৮৪৪টি মামলা যাচাই-বাছাই এবং এর মধ্যে ৭২০টি মামলা প্রত্যাহার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভারত প্রত্যাগত উপজাতি শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্ধার নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে কাঁচা-পাকা রাস্তা, সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম এ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও চোরাচালান প্রতিরোধের লক্ষ্যে ১০৩৬ কিমি. সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩১৭ কিমি. সীমান্ত সড়ক নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। পর্যটনশিল্প বিকাশে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি আধুনিক বিমানবন্দর নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে।
করোনা মহামারী মোকাবিলায় সরকার সারাদেশের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকাসহ সবার জন্য কোভিড-১৯ টিকা কর্মসূচি সম্পন্ন করেছে। তা ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে ম্যালেরিয়া নির্মূলে সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং অনেকাংশে তা নির্মূল হয়েছে। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে সংবিধানে একটি ধারা (২৩-ক) সন্নিবেশিত করেছে। ১৯৭৬ সালে জারি করা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন ২০১৪ জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে। চাকরির ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের নির্ধারিত কোটা অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। ১৯৯৮ সালে পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পার্বত্যাঞ্চলে রক্তক্ষয়ী সংঘাতময় পরিস্থিতি যুগের পর যুগ বিরাজমান ছিল। সব উদ্বেগ, শঙ্কা, উৎকণ্ঠা এবং রক্তক্ষয়ী সেই সংঘাতময় পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৭ সালের ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির মাধ্যমে। এই ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তির অংশীদার সমগ্র বাংলাদেশ। তাই এই চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে দল-মত নির্বিশেষে সবাই একযোগে কাজ করতে পারলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথ সুগম হবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের নাম বিশ্ব ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
মিতি সানজানা : সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও কলাম লেখক
Drop Your Queries
Dhaka Office
Chattogram Office
Dhaka Office Map
Chattogram Office Map