Dhaka: +88028835174-6; Chattogram: +88 09678 677 688

BARRISTERS | ADVOCATES | LEGAL CONSULTANTS

সিডওর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি ৪০ বছরেও

Published by Protidiner Bangladesh | September 03, 2024  (Link Here)

জাতিসংঘের ‘নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ’ (সিডও) ৪০ বছর আগে অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ, কিন্তু সনদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ধারায় এখনও আপত্তি প্রত্যাহার করেনি, যেখানে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। আপত্তি প্রত্যাহার না করার কারণ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, নারী-পুরুষের সমতায় অনেকে ক্ষেত্রেই পরিবর্তন মেনে নিতে সমাজ এখনও প্রস্তুত নয়। তবে এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকদের চিন্তাকে দায়ী করছেন মানবাধিকারকর্মীরা। 

এই অবস্থায় আজ (মঙ্গলবার) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সিডও দিবস। ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সিডও সনদ কার্যকর হয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৯টি দেশ সনদটিতে অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এটি স্বাক্ষর ও অনুমোদন করে। শুরুতে চারটি ধারার ওপর আপত্তি ছিল। পরে ২ ও ১৬(১)(গ) ধারার ওপর আপত্তি রেখে বাকি দুটি থেকে তুলে নেওয়া হয়। সিডও সনদের ২ ধারায় নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য নিরসনে আইনের সংস্কার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া এবং ১৬(১)(গ) ধারায় বিয়ে ও পারিবারিক আইনে সম-অধিকারের কথা বলা হয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপারসন হাইকোর্টের জ্যৈষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, সিডও কার্যকরে রাষ্ট্রচিন্তা এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের সমস্যা আছে। সরকারের কোনো সদিচ্ছা নাই। বলা হয়, সমাজের কথা। যতদিন মৌলবাদী দলের সঙ্গে রাজনৈতিক আঁতাত করে চলবে ততদিন সিডও বাস্তবায়ন সম্ভব না। সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিত হয়নি। তার থেকে ভালো হবে মেয়েদের স্কুলে ক্যারাতে শেখানোর ব্যবস্থা করা। এতে কিছুটা হলেও মেয়েরা ডমেস্টিক ভায়োলেন্স থেকে বাঁচবে। প্রয়োজনে বিনা পয়সায় ট্রেইনার দিব। আর কোনো উপায় তো দেখছি না। 

 

আইনজীবী মিতি সানজানা বলেন, সিডও সনদের ক্ষেত্রে সমাজের দোহাই দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট এমন যে নারীদের জন্য আলাদা বিশেষ আইন করতে হয়েছে। ২০১০ সালে আমাদের একটি ভালো আইন হয়েছে। শুধু আইন দিয়ে বৈষম্য নিরসন করা সম্ভব না। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। সেজন্য পাঠ্যপুস্তকে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। আমাদের সমাজের কিন্তু পুরুষই শুধু নারীবিদ্বেষী আচরণ করে না। সমাজের নারীদের বিশাল অংশ নারীবিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করে। তারা শারীরিকভাবে নারী হলেও মননে পুরুষতান্ত্রিক। তাই আমাদের বৈষম্য নিরসণে সামজিকভাবেও পরিবর্তন আনতে হবে।

সিডও বাস্তবায়নে জাতিসংঘেরও ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, একদিকে সরকার নারীবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, আবার সিডও সনদের ধারা থেকে আপত্তি তুলতে পিছিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের একটি মনিটরিং সেলকেও কাজ করতে হবে। শুধু বাংলাদেশ না বিশ্বের কোথাও সিডওর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। যে দেশগুলোতে হয়নি, কেন হয়নি এ বিষয়ে জাতিসংঘকে ভূমিকা রাখতে হবে।

কী আছে সিডও সনদে

সিডও সনদের ধারা আছে ৩০টি। ধারাগুলো তিন ভাগে বিভক্ত। ক) ধারা ১ থেকে ১৬ নারী-পুরুষের সমতা আনয়ন সম্পর্কিত। খ) ধারা ১৭ থেকে ২২ সিডও ও এর কর্মপন্থা ও দায়িত্ববিষয়ক। গ) ধারা ২৩ থেকে ৩০ সিডও ও এর প্রশাসন-সংক্রান্ত।

বাংলাদেশের আপত্তি দেওয়া দুটি ধারা হলোÑ ধারা-২: বৈষম্য বিলোপ করে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা স্থাপনের নীতিমালা গ্রহণ। প্রতিটি দেশের জাতীয় সংবিধান, আইনকানুন ও নীতিমালায় নারী ও পুরুষের সমতার নীতিমালা সংযুক্তকরণ ও তার প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইনকানুন, রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। সব ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ। আদালত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নারীকে সব ধরনের বৈষম্য থেকে রক্ষা করা। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নারীর প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন রোধ করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। ধারা-১৬.১(গ) : বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদকালে নারী ও পুরুষের একই অধিকার ও দায়দায়িত্ব নিশ্চিত করা।

Article