Published by DW News | September 21, 2024 (Link Here)
পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠেছে, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে নিহত হয়েছেন চার জন। গত ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত দুই হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯ জন নিহত হয়েছেন। চারজন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে একজন বাক প্রতিবন্ধী বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা এবার নানা সেক্টরের বিস্তৃত হয়েছে। অতীতে চোর, ডাকাত বা ছিনতাইকরী সন্দেহে মব জাস্টিসের ঘটনা ঘটওলেও এবার শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্যকরা, প্রশাসনের কাউকে সরিয়ে দেয়া বা পছন্দের কাউকে কেনো পদে বসানোর ক্ষেত্রেও মব জাস্টিসের ঘটনা ঘটেছে। এমকি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষককে শপথ পড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন ছাত্ররা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার পর ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিবাদ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের টনক নড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার এবং আটজন ছাত্রকে বহিস্কার করা হয়েছে। তবে অন্য ঘটনায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়ার খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, “প্রথম থেকেই যদি এই সব অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে এত ঘটনা ঘটতো না। একদল শিক্ষার্থী সচিবালয়ে গিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টাকে ঘেরাও করে তাদের পরীক্ষা বাতিলের দাবী আদায় করে নিলো। আর আনসাররা দাবি আদায় করতে গিয়ে মামলার শিকার হলো, গ্রেপ্তার হলো। এই বৈষম্য নীতির কারণেই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।”
হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় উত্তপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে চার জন নিহত হওয়ার পর রবিবার অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা সেখানে সার্বিক অবস্থা পরিদর্শনে যান। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাইরে থেকে “ষড়যন্ত্র” হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
তবে মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমরা আর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শুনতে চাই না। আমরা পাহাড়ে শান্তি চাই। অতীতে আমরা দেখেছি কোনো সরকার পরিবর্তন হলেই সংখ্যালঘু আর পাহাড়িদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা এবার সঠিক তদন্ত করে এর কারণ এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি।”
অ্যাডভোকেট জেড আই খান পন্না বলেন, “হাসান আরিফ সামরিক ভষায় কথা বলেছেন। এটা কাম্য নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান হবে।”
তার কথা, “দেশে এখন যে পরিস্থিতি তাতে অতীতের বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তারই ধারাবাহিকতা চলছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করা না গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।”
ব্যারিস্টার মিতি সানজানা বলেন, “এর জন্য প্রয়োজন স্বাধীন বিচারবিভাগ। বিচার বিভাগ সত্যিকার অর্থে স্বাধীন এবং প্রশাসন থেকে আলাদা করা না গেলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন।”
এদিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রবিবার বলেছেন, বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ ও আইসভা থেকে আলাদা করা খুবই জরুরি। তিনি বলেন,” নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের মতো বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তাব প্রস্তুতক্রমে আমরা শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করব। এই প্রস্তাব দ্রত বাস্তবায়নের জন্য আমি প্রধান উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক মনে করেন,” বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে শুধু বিচার বিভাগ স্বাধীন করলেই হবেনা আমাদের সাংস্কৃতিক ও মানসিক পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যক্তিগত আক্রোশ ও প্রতিহিংসার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। সেই জায়গায় পরিবর্তন দরকার। ব্যক্তি যদি নিজেই বিচার করতে চায় তাহলে তো অবস্থার উন্নতি হবেনা। ব্যক্তিকে ওই প্রবণতা থেকে দূরে রাখার জন্য শক্ত আইনি ব্যবস্থা দরকার।”
Drop Your Queries
Dhaka Office
Chattogram Office
Dhaka Office Map
Chattogram Office Map