Published by | The Daily Prothom Alo | January 27, 2021 (Link Here)
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন: আমি একজন গৃহিণী। ৩ বছর হলো বিয়ে হয়েছে। এখনো কোনো সন্তান হয়নি। বিয়ের পর থেকেই আমার স্বামী আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করে। বিয়ের আগে বলেছিল সে আমাকে পড়াশোনা করাবে। কিন্তু বিয়ের পর আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়। আমি স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের পর আর পড়তে পারিনি। সে অন্য মেয়েদের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করে। আমি বাধা দিলে আমার গায়ে হাত তোলে। আমি বেশ কয়েকবার তালাকের কথা বলেছি। আমার পরিবারের থেকে তালাকে সম্মতি আছে, কিন্তু আমার স্বামী বলেছে কোনো অবস্থাতেই আমি তাকে তালাক দিতে পারব না। আমাকে তার সংসার করতেই হবে। আমি তাকে তালাক দিতে চাই। কীভাবে তালাক দিতে পারি? তালাক দিলে কি দেনমোহর পাব?
বীথি, বাড্ডা, ঢাকা।
উত্তর: যেকোনো আইনসংগত কারণেই হোক না কেন, যদি স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ চান, তাহলে তাঁর এ অধিকার রয়েছে। তাঁকে জোর করে সংসার করানো সম্ভব না। কোনো এক পক্ষ যদি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তবে এ নিয়ে আর জটিলতা না বাড়ানো ভালো।
আপনি যদি বিচ্ছেদ চান, তবে কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামটিতে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে কি না, তা দেখে সরাসরি তালাক দিতে পারেন। যদি ১৮ নম্বর কলামে কোনো ক্ষমতা না দেওয়া থাকে, তাহলে আদালতে যেতে হবে। স্ত্রীর তালাকের ক্ষমতা না থাকলে পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে তালাকের ডিক্রি নিতে হয়। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং কিছুটা জটিলও বটে।
তালাক দেওয়ার বিষয়ে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে যে তালাক দিতে চাইলে তাকে যেকোনো পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর, অন্য পক্ষ যে এলাকায় বসবাস করছেন সে এলাকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান/ পৌরসভার মেয়র/ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে তালাক গ্রহীতাকে উক্ত নোটিশের নকল প্রদান করতে হবে। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে। আইনে বলা আছে তখনই/ পরবর্তী সময়ে/ যথাশিগগির সম্ভব। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগেও হতে পারে, আবার সরাসরিও হতে পারে। ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে এডি (অ্যাকনলেজমেন্ট ডিউ) সহযোগে পাঠালে ভালো হয়।
চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে যে তারিখে নোটিশ পৌঁছাবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন পর বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক কার্যকর হবে। এ নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে সালিসি পরিষদ গঠন করতে হবে এবং সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। নোটিশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সালিসের কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলেও তালাক কার্যকর বলে গণ্য হবে। তবে স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে গর্ভকাল শেষ হওয়ার পর তালাক কার্যকর হবে।
যে পক্ষই তালাক দিক না কেন, তালাক কার্যকরের পর তালাকটি যে কাজির মাধমে নোটিশ সম্পন্ন করা হয়েছে, সে কাজি অফিসে নিবন্ধন করাতে হবে। তালাক নিবন্ধন করা আইনত বাধ্যতামূলক।
এই বিষয়ে অবশ্যই একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করবেন। আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় কিংবা আগে তালাকের নোটিশ পাঠান, তাহলে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। স্ত্রী তালাক দিলেও তাঁর মোহরানা পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া যদি স্ত্রীকে আগে কোনো ভরণপোষণ না দেওয়া হয়, এ বকেয়া ভরণপোষণসহ ইদ্দতকালীন (তালাকের নোটিশ প্রদান থেকে তালাক কার্যকর হওয়া পর্যন্ত সময়) ভরণপোষণও প্রদান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ-সংক্রান্ত কোনো দাবিদাওয়া থাকলে স্ত্রী পারিবারিক আদালতেও যেতে পারেন।
Muslim Marriages and Divorces (Registration) Act-1974, Divorce law, Divorce, Muslim Marriage Registration, Bangladesh, Kabinnama, Nikahnama
Drop Your Queries
Dhaka Office
Chattogram Office
Dhaka Office Map
Chattogram Office Map