Cheating laws / প্রেমিকের প্রতারণা, মামলা করতে পারব?
প্রশ্ন: গত বছর আমি একটি ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়াই। তিন–চার দিনের মধ্যেই আমাদের প্রেম হয়ে যায়। প্রেমের এক সপ্তাহ পর তার সঙ্গে আমার শারীরিক সম্পর্কও হয়। এরপর থেকে টানা প্রায় আট মাস নিয়মিত আমাদের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। ছেলেটির নাম আমাকে যেটা বলেছিল, তার এনআইডি কার্ডের সঙ্গে সেই নামের অমিল খুঁজে পাই একদিন। এরপর নানাভাবে তার সঠিক পরিচয় ও ঠিকানা খুঁজতে থাকি। কিন্তু পাচ্ছিলাম না। ছেলেটি আমাদের বাড়ির পাশে একটি ভবন নির্মাণের কাজে জড়িত ছিল। সেখান থেকেই পরিচয় হয়। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন সে উধাও। তাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। ওখানে কাজ করা অন্য কেউ তার পরিচয় জানত না, কোথায় চলে গেছে কেউ বলতে পারছে না। তার মোবাইল ফোনে কিছু ঘনিষ্ঠ ছবি ছিল। আমি কি তার নামে মামলা করতে পারব? ভয় পাচ্ছি, যদি পরে ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: প্রতারণা নানাভাবেই হতে পারে। যেমন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে প্রতারণা, মিথ্যা পরিচয় প্রদান করে প্রতারণা, বিয়ে নিয়ে প্রতারণা, আর্থিক প্রতারণা ইত্যাদি। একেক ধরনের প্রতারণার অভিযোগে আলাদা শাস্তির বিধান রয়েছে। সাধারণত প্রতারণার ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় মামলা অনেক বেশি প্রচলিত। এ ধারায় শাস্তি সর্বোচ্চ সাত বছর। পাশাপাশি অর্থদণ্ডেরও বিধান আছে।
দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে, তার কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। আপনার প্রেমিক আপনার কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রেম করেছে এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করে, তারপর আপনার ক্ষতিসাধন করেছে। এর জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, সে প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। যেহেতু সে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে, নাম–পরিচয় গোপন করে আপনার সঙ্গে প্রেম করেছে, কাজেই প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ করা সহজ হবে।
তা ছাড়া আপনার প্রেমিক আপনার বিশ্বাস ভঙ্গ করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করে পরবর্তী সময়ে উধাও হয়ে গিয়েছে। সুতরাং আপনি সেই বিশ্বাস ভঙ্গের জন্য দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় প্রতিকার চাইতে পারবেন। দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তিকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। বিশ্বাসভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ।
থানায় এজাহার দায়ের করে মামলা করা যায় অথবা আদালতে সরাসরি মামলা করা যায়। আপনি যেহেতু ছেলেটির নাম–পরিচয় জানেন না, কাজেই আপনি তাঁর চেহারা ও শারীরিক গঠনের বর্ণনা দিলে পুলিশ তাঁকে খুঁজে বের করতে পারবে। সে যাতে আপনার ছবি ব্যবহার করে আপনাকে ব্ল্যাকমেল না করতে পারে, সে জন্য আপনি অবশ্যই একটি সাধারণ ডায়েরি করবেন। আর ভয় না পেয়ে আইনের আশ্রয় নেবেন।