Published by Prothom Alo | July 05, 2023 (Link Here)
অনেক সময়ই আমরা শুনে থাকি, সন্তান অবাধ্য হলে অথবা বাবা-মার সঙ্গে বিরোধে জড়ালে তাঁদের ত্যাজ্য করার হুমকি দেন তাঁরা। বাংলা সিনেমায় তো একসময় অহরহ ‘ত্যাজ্যপুত্র’ বা ‘ত্যাজ্যকন্যা’রা বাবার হুমকির মুখে দাঁড়িয়েও ভালোবাসার হাত ধরে বেরিয়ে যেতেন। সাধারণত মুখে মুখে ঘোষণা দেওয়া হলেও অনেক মা-বাবা স্ট্যাম্পে লিখে বা নোটারি করেও সন্তানকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন।
উত্তরাধিকার, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব ইত্যাদি বিষয় সাধারণত যাঁর যাঁর নিজস্ব ধর্মীয় আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এ আইনের মূল লক্ষ্য হলো ইসলাম ধর্মের মানুষদের পারিবারিক ভাঙন রোধ করে বন্ধন সুদৃঢ় করা। এই আইনটিকে কখনো কখনো নিরাপত্তামূলক সামাজিক আইনও বলা হয়ে থাকে। এ আইন বাস্তবায়নে সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ জারি করা হয়। এ আইনে কোথাও ত্যাজ্য সন্তান করার কোনো বিধান নেই।
বাবা-মা চাইলে অবাধ্য সন্তানকে তাঁদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে পারেন। তবে আইনগত, ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয় কোনোভাবেই সন্তানকে ত্যাজ্য করা সম্ভব নয়। ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয় আইনের কোথাও সন্তানকে ত্যাজ্য করার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।
একজন মুসলমান তাঁর সমুদয় সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের বেশি উত্তরাধিকার নয়, এমন কাউকে উইল করতে পারেন না। ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উইল করলেও তাতে ওয়ারিশদের সম্মতি থাকতে হবে, না থাকলে অসিয়তকারীর নিট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগের (১/৩ অংশে) ওপর উইল কার্যকর হবে।
তবে পিতা-মাতা সন্তানদের সম্পত্তি দিতে না চাইলে জীবিতাবস্থায় অন্য কাউকে তা দান বা বিক্রি করে সম্পত্তির দখল ছেড়ে দিয়ে যেতে হবে। না হলে মৃত্যুর পর তাঁদের সন্তানেরা আইনগত উত্তরাধিকারী হিসেবে আপনাআপনি সেই সম্পত্তির অংশীদার হবেন। কোনো অভিভাবক যদি জীবিত অবস্থায় সন্তানকে ত্যাজ্যপুত্র/ত্যাজ্যকন্যা বলে ঘোষণা করেন, ভবিষ্যতে তাঁরা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন বলে দিলেই সন্তানেরা ত্যাজ্য হয়ে যাবেন না। এমনকি দলিল কিংবা হলফনামার মাধ্যমে ত্যাজ্য করলেও সেই দলিল বা অ্যাফিডেভিট আইনের চোখে অবৈধ। এ ধরনের অবৈধ দলিল আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করার কোনো সুযোগ নেই। বরং সন্তানেরা চাইলে এই পরিস্থিতিতে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। দেওয়ানি আদালতে এ ধরনের অবৈধ দলিল বাতিল চেয়ে মামলা করতে পারেন।
মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কটা কোনো ব্যবসায়িক বা সামাজিক চুক্তি নয়। এ সম্পর্ক বিয়ের মতো না। তাই চাইলেই এটি অস্বীকার যায় না। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক, তা কখনো মুখের কথায় ভেঙে ফেলা যায় না। পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানদের কোনো ধরনের বিরোধ যখন দেখা দেয়, তখন এর সুযোগ নিয়ে আত্মীয়স্বজন বা স্বার্থান্বেষীরা তথাকথিত ত্যাজ্য সন্তানকে তার ভাগের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে থাকে। আইন অনুযায়ী, এটি সম্পূর্ণ বেআইনি, নীতিবহির্ভূত ও গর্হিত কাজ।
Drop Your Queries
Dhaka Office
Chattogram Office
Dhaka Office Map
Chattogram Office Map