Nari O Shishu Nirjatan Daman Ain 2000
প্রশ্ন: আমার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না। সে যখন রাগ করে তার মাথা ঠিক থাকে না। আমার সঙ্গে রাগারাগি করে সে প্রায়ই তার বাবার বাড়িতে চলে যায়। অনেক দিন সেখানে থাকে। সংসারের কোনো দায়িত্ব সে পালন করে না। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, কোনো বাগ্বিতণ্ডা হলে আমার স্ত্রী আমার নামে নারী নির্যাতনের মামলা করার হুমকি দেয়, যদিও আমি তাকে কখনোই কোনো ধরনের নির্যাতন করিনি।
স্ত্রী যদি মিথ্যা মামলা করে আমার বিরুদ্ধে, সে ক্ষেত্রে আমি আগে থেকে কোনো প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারি কি না?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, উত্তরা, ঢাকা
উত্তর: আপনার স্ত্রী যদি আপনার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন, তবে আপনাকে প্রথমে জানতে হবে, মামলাটি থানায় নাকি আদালতে হয়েছে। এরপর আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার আরজি বা এজাহারের কপি তুলতে হবে। এরপর আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে, মামলাটির ধারা জামিনযোগ্য কি না। যদি তা জামিনযোগ্য হয়, তবে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে পারবেন।
অভিযোগ জামিন-অযোগ্য হলে, উচ্চ আদালতে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে আগাম জামিন চাইতেও পারবেন। তবে হাইকোর্ট বিভাগ আগাম জামিন সাধারণত নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দিয়ে থাকেন। এ মেয়াদের মধ্যেই নিম্ন আদালতে গিয়ে জামিননামা সম্পাদনের জন্য আবেদন করতে হবে। আদালতে বিচার চলাকালে নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিত থেকে হাজিরা দিতে হবে। কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলে আসামির জামিন বাতিল করে দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের আছে।
সাধারণত পুলিশ প্রতিবেদন হওয়ার আগেই জামিন চাইতে হয়। পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করার আগে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগটি যে মিথ্যা, তা প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারেন। থানায় তদন্তকারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন বা ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে দাখিল করবেন।
অভিযোগপত্র দাখিল হয়ে গেলে মামলাটি বিচারিক আদালতে বদলি করা হয়। অভিযোগ গঠনের দিন আসামিকে হাজির হয়ে নতুন করে পূর্বশর্তে জামিন চাইতে হবে এবং জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। এই আবেদনে আসামি মামলা থেকে অব্যাহতি চাইতে পারেন। অব্যাহতির আবেদন নাকচ হলে উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন তিনি।
মিথ্যা মামলা হওয়ার পর যদি পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়, তবে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে পারবেন। যদি আদালত জামিন দেন, তাহলে একজন পরিচিত জামিনদারের জিম্মায় আসামিকে জামিননামা সম্পাদন করতে হবে। যদি জামিন না হয়, তাহলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতে আবেদন করতে হবে।
যদি থানায় না হয়ে আদালতে মামলা (সিআর মামলা) হয়, তাহলে আদালত সমন জারি করতে পারেন কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে হাইকোর্ট বিভাগে আগাম জামিন চাইতে পারেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত) এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়ছে। ২৫০ ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন।
দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি এবং মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। তা ছাড়া আপনার স্ত্রীর এ ধরনের হুমকি ও আচরণের কথা উল্লেখ করে আপনি নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে রাখতে পারেন।