Published by |The Daily The Daily Ittefaq | February 23, 2021 (Link Here)
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। একজন অবিসংবাদী নেতা। দেশের নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় ও স্বাধীনতা অর্জনে তিনি তার জীবনের প্রায় ১৪টি বছর কাটিয়েছেন কারাগারের অন্ধকার সেলে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর কোনো দমন-নিপীড়ন তাকে দমাতে পারেনি এতটুকুও। ১৯৬৮ সাল। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা তত্কালীন পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠীকে বিচলিত করে তোলে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা কর্মসূচির মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনের দাবি পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণসমর্থন লাভ করে। শেখ মুজিবের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা তাদের কোণঠাসা করে তোলে। যখন মুজিব জনমত গড়তে নিরন্তর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, ঠিক তখনি পাকিস্তানি শাসকরা মিথ্যা দেশদ্রোহীর তকমা লাগিয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে। ১৯৬৮ সালের প্রথম দিকে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে আরো ৩৪ জন বাঙালি সামরিক ও সিএসপি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে, যা ইতিহাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে সুপরিচিত। এই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছিল, শেখ মুজিবসহ এই কর্মকর্তারা ভারতের ত্রিপুরা অঙ্গরাজ্যের অন্তর্গত আগরতলা শহরে ভারত সরকারের সঙ্গে এক বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করেছে। এই ঐতিহাসিক মামলায় শেখ মুজিবকে এক নম্বর আসামি করা হয় এবং পাকিস্তান বিভক্তিকরণের (যা ষড়যন্ত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়) মূল হোতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অভিযুক্ত সব আসামিকে ঢাকা সেনানিবাসে আটকে রাখা হয়।
পূর্ব পাকিস্তান ব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সর্বস্তরের মানুষ শেখ মুজিবসহ অভিযুক্ত সবার মুক্তির দাবিতে রাজপথে নেমে আসে। একই বছরের ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অভিযুক্ত আসামিদের বিচারকার্য শুরু হয়। বিচার চলাকালে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারির ৫ তারিখে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ১১ দফা দাবি পেশ করে, যার মধ্যে শেখ মুজিবের ছয় দফার সবগুলো দফাই অন্তর্ভুক্ত ছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। এই সংগ্রাম এক সময় গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। এই গণ-আন্দোলনই ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান নামে পরিচিত। মাসব্যাপী প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আন্দোলন, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, কারফিউ, পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং বেশ কিছু হতাহতের পর আন্দোলন চরম রূপ ধারণ করে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের তীব্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার অচিরেই মামলাটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব কারাগার থেকে মুক্তি পান।
২৩ ফেব্রুয়ারি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ মানুষের বিশাল জনসভায় তত্কালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদ কারামুক্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পক্ষে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি ঘোষণা করেন। একই দিনে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতাও ঘোষণা করা হয়। কৃতজ্ঞ জাতি তাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে দেয় ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি যার অর্থ জনগণের বন্ধু। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর মধ্যেই ছিল তার শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জন্য তার জীবন উত্সর্গ করে গেছেন। মাত্র ৫৪ বছর বয়সের জীবনে এক-চতুর্থাংশ কেটেছে অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে। কিন্তু তাতেও এতটুকু বিচলিত দেখা যায়নি মহান এই নেতাকে। বঙ্গবন্ধুর এই মহান আত্মত্যাগ এর হাত ধরেই বাঙালি জাতি অর্জন করে স্বাধীনতা। সংক্ষিপ্ত জীবনে মানুষ তার দেহকে অমরত্ব না দিতে পারলেও তার কীর্তির অমরত্ব দিতে পারে। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ এই মহান নেতা। ‘বঙ্গবন্ধু’ কেবল একটি উপাধি কিংবা খেতাব নয়, এটি সমগ্র বাঙালি জাতির কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ তাদের প্রিয় নেতার প্রতি। বাঙালির হূদয়ের মণিকোঠায় এই মহাপ্রাণ নেতা জনগণের বন্ধু হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল।
Bangabandhu, Bangabandhu Sheik Mujibur Rahman, Mujibur Rahman, Tungipara, Gopalganj, 17 March 1920, 15 August 1975, Prime Minister Sheik Hasina, Jatir pita,বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান,
Drop Your Queries
Dhaka Office
Chattogram Office
Dhaka Office Map
Chattogram Office Map