প্রশ্ন: আমি একজনকে ভালোবেসেছিলাম। তিন বছর আমাদের সম্পর্ক ছিল। পরে জানতে পারি, সে আমার থেকে চার বছরের বড় এবং পূর্বে তার আরও একজন প্রেমিক ছিল। এসব জানাজানি হওয়ার পর আমাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়।
সম্পর্ক ভাঙার এক বছর পর সে আবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আমাকে শেষ দেখা করার জন্য অনুরোধ করে। গত ১৯ নভেম্বর সরল মনে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে লোকজন নিয়ে জোরপূর্বক তৎক্ষণাৎ আমাকে সে বিয়ে করে। দেনমোহর ধার্য করে তিন লাখ টাকা।
বর্তমানে আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাসা থেকে কোনোক্রমে ওই মেয়েকে মেনে নিবে না। তার সঙ্গে এখন পর্যন্ত সুসম্পর্ক বজায় রাখছি, যাতে করে আমার বাসায় বিষয়টা জানতে না পারে। আমি আর তার সঙ্গে সংসার করতে চাই না। কীভাবে আমি এসব থেকে বেরিয়ে আসতে পারি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনি জানিয়েছেন, আপনার সাবেক প্রেমিকা বা তার পরিবার কৌশলে আপনাকে উঠিয়ে নিয়ে বা প্রতারণার আশ্রয়ে বিয়ে করেছে। জোরপূর্বক তারা দেনমোহর ধার্য করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে একটা চক্র আছে, যারা বিয়ে ও দেনমোহর আদায়টাকে একটা ব্যবসা হিসেবে বেছে নিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ছেলেকে জিম্মি করে তারা বিয়ে পড়িয়ে দেয়। ধার্য করা হয় মোটা অঙ্কের দেনমোহর। পরে ছেলেকে তালাক দিয়ে দেনমোহরের জন্য চাপ দেওয়া হয় অথবা মামলা করা হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটা মেয়ে ছেলেকে পছন্দ করে কিন্তু ছেলে মেয়েকে পছন্দ করে না। সে ক্ষেত্রে মেয়ে নিজে বা তার পরিবারের সাহায্যে কৌশলে বা জোরপূর্বক ছেলেকে বিয়ে করে। এখানেও মোটা অঙ্কের টাকা দেনমোহর হিসেবে ধার্য করা হয়।
যে পক্ষই তা করুক না কেন, দেশের আইনে এটা কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনি দাবি করেছেন, আপনাকে জোরপূর্বক বিয়ে করা হয়েছে। তাহলে আপনি তালাক দিয়ে দিলেই সমস্যার একটা সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু বিয়ে জোরপূর্বক বা প্রতারণার মাধ্যমে করা হলেও আপনি তার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছেন। আপনার উচিত ছিল, তার সঙ্গে মেলামেশা না করে যত দ্রুত সম্ভব অপর পক্ষের বিরুদ্ধে থানায় বা আদালতে ক্রিমিনাল মামলা করা। পাশাপাশি বিয়েকে অস্বীকার বা চ্যালেঞ্জ করে দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা করা। অপর পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে একবার বিয়েকে মেনে নিলে পরে আর অস্বীকার করা যায় না। আর একবার বিয়েকে স্বীকার করে নিলে অবশ্যই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে। কাজেই এখন আপনাকে আইনগতভাবে তালাক দিতে হবে এবং দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। তবে প্রতারণার জন্য তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
তা ছাড়া দণ্ডবিধির ৪০৬ ধারায় বলা আছে, অপরাধজনিত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে দোষী হলে দায়ী ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিশ্বাসভঙ্গ একটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। থানায় এজাহার দায়ের করে মামলা করা যায় অথবা আদালতে সরাসরি মামলা করা যায়।