প্রশ্ন: আমি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ছি। এক মেয়ের সঙ্গে আমার সাড়ে পাঁচ বছরের একটা সম্পর্ক ছিল। আমরা গোপনে ২০১৮ সালে সনাতন ধর্মমতে মন্দিরে গিয়ে বিয়েও করেছি। বিয়ের পর আমাদের অনেকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। আমাদের কারও বাসার কেউ এই বিয়ের কথা জানত না। আমি বিয়ের পর তার যাবতীয় দায়িত্বও নিয়েছি।
এখন হঠাৎ আমার স্ত্রী এই সম্পর্ক অস্বীকার করছে এবং আমাকে এড়িয়ে চলছে। কোনোভাবেই স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। সে আমার বাসায় আমার বাবাকে পর্যন্ত ফোন করে বলেছে যে আমি নাকি তাকে বিরক্ত করছি। শুনলাম, সে এখন অন্য কোথাও বিয়ে করছে পরিবারের মতে, আমি কিছু বললে তার পরিবার আমাকে মামলা, হামলা ইত্যাদি ভয় দেখায়। সে আমার সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করবে, সেটা কখনো ভাবিনি। ছেলেদের কি অনুভূতি নেই? তাদের কি বেঁচে থাকার অধিকার নেই? এত কিছুর পরও সে আমার সঙ্গে এমনটা করছে, মানতে পারছি না। বেঁচে থাকার কোনো কারণ পাচ্ছি না। কোনো আইনি উপায় থাকলে, তা জানতে চাই।
শুভ
উত্তর: এটি খুব দুঃখজনক ব্যাপার যে আপনাকে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। হিন্দু বিয়ে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। রেজিস্ট্রেশন না করা হলে অনেক ক্ষেত্রে বিয়ে অস্বীকার করা হয়, যেমনটি আপনার ক্ষেত্রেও হয়েছে।
নিবন্ধন না করলে, বিবাহিত থাকা অবস্থায় আবার কাউকে বিয়ে করলে পূর্ববর্তী বিয়েটি আদালতে প্রমাণ করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই জন্ম–মৃত্যুর মতো হিন্দুদের জন্য বর্তমানে বিবাহনিবন্ধন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ‘হিন্দু বিবাহনিবন্ধন আইন, ২০১২’ নামে পরিচিত। এই আইনে কীভাবে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন করতে হবে, সেটার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। তবে আইনে হিন্দু বিবাহনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়নি। আপনার প্রশ্ন থেকে মনে হচ্ছে, আপনি সনাতন ধর্মমতে মন্দিরে বিয়ে করেছেন কিন্তু বিয়েটি নিবন্ধন করেননি। নিবন্ধন না করলেও আপনার বিয়েটি বৈধ হবে।
হিন্দু বিয়েতে বিচ্ছেদের কোনো বিধান নেই। কাজেই স্বামী থাকা অবস্থায় একজন হিন্দু নারীর দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করার সুযোগ নেই। কেউ যদি এই বিধান লঙ্ঘন করেন, প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বলবৎ থাকা অবস্থায় অন্যত্র বিয়ে করেন, তাহলে প্রথম স্বামী সেই স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সেই সঙ্গে জরিমানাও হতে পারে। অন্যদিকে স্ত্রী যদি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় যাঁকে বিয়ে করছেন, তাঁর কাছে আগের বিয়ের কথা গোপন করেন, তাহলে সেটি দণ্ডবিধির ৪৯৫ ধারা অনুসারে একটি অপরাধ। এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা।
তবে যেহেতু আপনারা গোপনে বিয়ে করেছেন এবং ধরে নিচ্ছি নিবন্ধনও করেননি, তাই এই বিয়ে প্রমাণ করা খুব কঠিন। সে ক্ষেত্রে আপনাদের বিয়ের কোনো ছবি থাকলে, সেটি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কোনো বন্ধুবান্ধব বা কেউ যদি বিয়েতে উপস্থিত থাকেন, তাঁদের সাক্ষী হিসেবে আদালতে নিয়ে যেতে পারেন। ছেলে হওয়ায় আইনকানুন আপনার পক্ষ নেবে না, এই ধারণা সত্যি নয়। সব মানুষের অনুভূতি ও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আইনের আশ্রয় লাভ ও আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যেকোনো নাগরিকের (নারী–পুরুষনির্বিশেষে) সাংবিধানিক অধিকার।
সবশেষে বলতে চাই, সমস্যা যতই জটিল হোক, সেটা সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করুন। আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। জীবনকে উপভোগ করতে শিখুন। জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। আত্মহত্যা অমূল্য জীবনের অপচয়। প্রত্যাখ্যানের বেদনা মেনে নিতে কষ্ট হলে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা।