Published by Prothom Alo | November 16, 2022 (Link Here)
Husband Cheating on wife on Bigo app – খুব অল্প বয়সেই আমার বিয়ে হয়ে যায়, এসএসসি পরীক্ষাও দিতে পারিনি। পাত্র বিদেশে থাকে। সে খুব বদমেজাজি, রাগ উঠলে গায়ে হাত তোলে। রাগলে অবশ্য সে তার মায়ের গায়েও হাত তোলে।
এক বছর আগে হঠাৎ আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারি, বিগো নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে সে মেয়েদের সঙ্গে খারাপ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে আমার সঙ্গে ঝগড়া হয় বলেই ওই সব নারীর সঙ্গে সে সম্পর্কে জড়িয়েছে।
প্রতিবছর তাকে এনজিও থেকে টাকা (ঋণ) তুলে দেই, বিদেশে বসে সে লোন চালায়, শেষ হলে আবার তুলে দিতে হয়। বিদেশে থাকলেও তার কোনো বিশেষ আয় নেই। এরপর সে হঠাৎ দেশে আসে। আমি আমার পরিবারকে বলি, তোমরা তাকে বোঝাও, নয়তো একটা ফয়সালা করো।
বাড়ির লোকের এক কথা, দেশে এসেছে স্বামীকে সময় দাও, ঠিক হয়ে যাবে। ওকে আমাদের সন্তানদের কথা বলে বোঝাই। ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে সে আমাকে বলে, এগুলো আর করবে না। কিন্তু বিদেশে গিয়ে আবার সেই একই অবস্থা।
কিছুদিন আগে আমার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, এমন এক নারী আমাকে ফোন করে জানায়, তোমাদের সংসারের কথা ভেবে আমি তার কাছ থেকে সরে আসি। কিন্তু তোমার স্বামী তো আমাকে ভাইরাল করে দিয়েছে। স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলে সে গালাগালি করে।
বাড়ির সবাই চায়, মুখ বুজে সহ্য করি, কারণ, আমার দুটি সন্তান আছে। নানা নারীর সঙ্গে তার খারাপ কাজের ভিডিও আমাকে বিভিন্ন সময় পাঠিয়েছে। আমার নিজের কিছু করারও অবস্থা নেই যে দুই বাচ্চাকে নিয়ে আলাদা থাকব। এমন অবস্থায় না বেঁচে আছি, না মরে গেছি। আমাকে একটা পরামর্শ দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার চিঠি পড়ে বুঝতে পারছি, আপনি বিচ্ছেদ চাচ্ছেন না, বরং সংশোধনমূলক সমাধানের পথ খুঁজছেন। আপনার স্বামী দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি আপনার গায়েও হাত তোলেন। আপনি এনজিও থেকে টাকা তুলে দিয়েছেন কেন, জানাননি।
গালিগালাজ ও গায়ে হাত তোলার মতো বিষয়গুলো পারিবারিক সহিংসতার মধ্যে পড়বে। পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি কতৃর্ক পরিবারের অপর কোনো নারী বা শিশু সদস্যের ওপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝাবে। জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সব প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯-এর স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ প্রণীত হয়েছে।
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এ প্রথমবারের মতো পারিবারিক সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা প্রণীত হয়েছে। একজন শিশু বা নারী যিনি পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে পরিবারের অপর কোনো সদস্য কতৃর্ক সহিংসতার শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন বা সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, তিনি দেশের আইন অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারবেন।
আইনের অধীন আপনি নিম্নলিখিত প্রতিকারগুলো চাইতে পারবেন—
ক. এই আইন অনুসারে প্রতিকার পাওয়ার অধিকার;
খ. চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির সুযোগ;
গ. প্রয়োগকারী কর্মকর্তার নিকট হতে সেবা প্রাপ্তির সুযোগ;
ঘ. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ অনুসারে বিনা খরচে আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রাপ্তি বা অন্য কোনো আইন অনুসারে প্রতিকার প্রাপ্তির উপায়।
আদালতে আবেদন: আপনি বা আপনার পক্ষে কোনো প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী বা অন্য কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন প্রতিকার পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে আদালত আবেদন শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন।
পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এর অধীন একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিম্নবর্ণিত প্রতিকার পেতে পারেন।
১. অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ: অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ নিয়ে আইনের ১৩ ধারায় বলা হয়েছে। আদালত সন্তুষ্ট হলে প্রতিপক্ষ বা তাঁর প্ররোচনায় পারিবারিক সহিংসতা ঘটলে বা ঘটার আশঙ্কা থাকলে আদালত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ প্রদান করতে পারবেন।
২. সুরক্ষা আদেশ: সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ও প্রতিপক্ষকে শুনানির সুযোগ প্রদান করে আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে পারিবারিক সহিংসতা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা আছে, তাহলে সুরক্ষা আদেশ প্রদান করতে পারবে এবং প্রতিপক্ষকে পারিবারিক সহিংসতামূলক কোনো কাজ সংঘটন, পারিবারিক সহিংসতামূলক কাজ সংঘটনে সহায়তা করা বা প্ররোচনা করা বা সুরক্ষা আদেশে উল্লেখিত অন্য যেকোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিতে পারবেন।
৩. বসবাস আদেশ: এই আইনের ১৫ ধারায় বসবাসের আদেশ নিয়েও বলা আছে। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বসবাস আদেশ প্রদান করতে পারবেন। যেমন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যেখানে বসবাস করেন সেখানে প্রতিপক্ষকে বসবাস বা যাতায়াত করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে বাসার কোনো অংশ থেকে বেদখল করা বা ভোগদখলে কোনো রূপ বাধা সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখা ইত্যাদি। আদালত যদি মনে করেন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তাঁর সন্তানের জন্য নিরাপদ নয়, তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সম্মতির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত প্রয়োগকারী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধায়নে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থানের ব্যবস্থা করবেন।
তা ছাড়া প্রতিপক্ষকে জামানতসহ বা ছাড়া মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দিতে পারবেন, যেন তিনি বা তাঁর পরিবারের অন্য কোনো সদস্য ভবিষ্যতে পারিবারিক সহিংসতামূলক কাজ করতে না পারেন।
৪. ক্ষতিপূরণ আদেশ: আইনের ১৬ ধারায় ক্ষতিপূরণের আদেশের কথা বলা হয়েছে। আদালত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং তাঁর সন্তানের ভরণপোষণের জন্য তিনি যে ধরনের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত, সে রকম জীবনযাত্রার জন্য পর্যাপ্ত ও যুক্তিযুক্ত অর্থ প্রদানের জন্য প্রতিপক্ষকে আদেশ দিতে পারবেন। তা ছাড়া উপযুক্ত মনে করলে এককালীন বা মাসিক ভরণপোষণ পরিশোধের আদেশ দিতে পারবেন আদালত।
৫. নিরাপদ হেফাজত আদেশ: আদালত উক্ত আইনের অধীন আবেদন বিবেচনার যেকোনো পর্যায়ে আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির সন্তানকে তাঁর নিকট অথবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো আবেদনকারীর জিম্মায় অস্থায়ীভাবে সাময়িক নিরাপদ হেফাজতে রাখার আদেশ দিতে পারবেন।
কাজেই আপনি চাইলে যেকোনো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা বা সরাসরি আদালতের কাছে সুরক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপোষযোগ্য।
এই আইনের ৩০ ধারায় শাস্তির বিধান সম্পর্কে বলা আছে। তবে আদালত চাইলে প্রতিপক্ষকে ধারা ৩০-এর অধীন শাস্তি না দিয়ে ৩১ ধারা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমাজকল্যাণমূলক কাজে সেবা প্রদানের জন্য আদেশ দিতে পারবেন এবং বিষয়টি তত্ত্বাবধায়নের জন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে দায়িত্ব প্রদান করতে পারবেন।
এই আইনের ভালো দিক হচ্ছে আইনে শাস্তির পাশাপাশি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। যার ফলে পুনরায় দুই পক্ষের মধ্যে আপোষ নিষ্পত্তি করা সহজ হয়। আশা করি, আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
Drop Your Queries
Dhaka Office
Chattogram Office
Dhaka Office Map
Chattogram Office Map